সব
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিন
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় আতঙ্কের মধ্যে জীবনযাপন করছে রাজধানীবাসী। টানা বৃষ্টিপাত ও জলাবদ্ধতার কারণে বেড়েছে এডিস মশা। বর্ষার মূল মৌসুমের পরে ডেঙ্গুর প্রকোপের নজির এর আগেও রয়েছে। প্রকোপ বাড়লেই দেখা যাচ্ছে না জোরালো কোনো পদক্ষেপ। রাজধানীজুড়ে যেন চাষ হচ্ছে এডিস মশার। এখনই মশক নিধনে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়া না হলে ডেঙ্গু আরো ভয়াবহ রূপ নিবে। এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু ঠেকাতে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিতে হবে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে, ঢামেকে অতিরিক্ত রোগীর চাপে হাসপাতালে বেড পাচ্ছে না ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীরা। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, মুগদা-যাত্রাবাড়ী এলাকায় সব সময় ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেশি থাকে। হাসপাতালের চারপাশ দেখে মনে হয় এখানে মশার চাষ হয়। মেঝেতেও রোগী আছে। কিন্তু মশারি টাঙানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। সরকারি হাসপাতালের পাশাপাশি চাপ বেড়েছে বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও। গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডেঙ্গুর প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৩৩ জন। মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। আর মঙ্গলবার রোগী ছিল ৯৮১ জন ও মৃতের সংখ্যা ছিল ৫। সোমবার রোগী ছিল ১ হাজার ২১৮ জন। দুজনের মৃত্যু হয়েছিল। রবিবার রোগী ছিল ১ হাজার ২২৫ জন, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চসংখ্যক। চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতাল ভর্তি হওয়া অধিকাংশ ডেঙ্গুরোগী শক সিনড্রোম (অতিদ্রুত রক্তচাপ ও রক্তে অণুচক্রিকার পরিমাণ কমে যাওয়া) এবং শরীরে তরল ব্যবস্থাপনার (ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট) জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন। ফলে রক্তক্ষরণ ও শরীরে পানিশূন্যতার কারণে অনেকে অচেতন হয়ে পড়ছেন। কারো কারো মৃত্যুও হচ্ছে। তাই এই সময়ে জ্বর হলে কোনোভাবেই অবহেলা না করার পরামর্শ তাদের। তবে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কমাতে হলে মশা নিয়ন্ত্রণ জরুরি বলে মনে করেন তারা। এদিকে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নূর জাহান বেগম। গত ৮ অক্টোবর সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ডেঙ্গু ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। আমাদের হাসপাতালগুলোকে সতর্ক করে দেয়া আছে, যাতে ডেঙ্গুর প্রকোপ কমানো যায়। আমরা চেষ্টা করছি সবাইকে সচেতন করতে। সবার সঙ্গে কথা বলছি যাতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসায় গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। চিকিৎসকদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডেঙ্গুর লক্ষণ, উপসর্গ নিয়ে আসা রোগী ভর্তির প্রয়োজন হলে ভর্তি করে নেবে। কোনো রোগী ফেরত যাবে না। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গুর প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়। ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। এ মশা যত বেশি হবে, ডেঙ্গুর হারও তত বাড়বে। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। আমাদের প্রত্যাশা, এডিস নিধন এবং এডিসের বংশবিস্তার রোধে জোরদার অভিযান পরিচালনা করবে সংশ্লিষ্টরা।
মন্তব্য