সব
সম্পাদকীয়
গত ৫ আগস্ট সারাদেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি থেকে প্রায় ৬ হাজার অস্ত্র লুট হয়েছে। অথচ এখন পর্যন্ত দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এসব অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা করছে আমাদের বাহিনীগুলো। মাটি খুঁড়েও অস্ত্র বের করা হচ্ছে। ভয়ানক ব্যাপার হলো দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনেক অস্ত্র এখন দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও অপরাধীদের কাছে। থানা, ফাঁড়ি, গণভবন ও সংসদ ভবন থেকে এসব অস্ত্র-গুলি লুট করেছে দুর্বৃত্তরা। লুট হয়েছে র্যাবের অস্ত্র-গুলিও। থানায় জমা রাখা বৈধ অস্ত্র এবং বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার করে থানায় রাখা অবৈধ অস্ত্রও লুট হয়েছে। লুটকারীরা অনেকে থানা দখল করে উল্লাস করেছে। সেই ছবি দিয়েছে সামাজিক মাধ্যমে। যৌথবাহিনী থানার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার পর অনেক দখলদার লুটের ঘটনার বর্ণনা করেছে। লুট করা অস্ত্র থেকে দুয়েকটি অস্ত্র যৌথবাহিনীর কাছে ফিরিয়ে দিয়ে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার নাটকও করেছে একাধিক চক্র। নথি পুড়িয়ে দেয়ায় অপরাধীদের কাছে থেকে উদ্ধারের পর থানায় জমা দেয়া অবৈধ অস্ত্রের সঠিক হিসাবেও গড়মিল হচ্ছে। এসব অস্ত্র-গুলি এখন দেশে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করেছে। মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্সের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ উমর ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেছেন- পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অস্ত্র লুট হয়ে অপরাধীদের হাতে চলে যাওয়ায় জননিরাপত্তা নিয়ে সবাই উদ্বিগ্ন। এসব অস্ত্র ব্যবহার করে অনেক অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। ছিনতাই-অপহরণে এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। যৌথবাহিনীর অভিযান কার্যকর করা না গেলে এসব অস্ত্র নিয়ে আতঙ্ক কাটবে না বলে মনে করেন তিনি। র্যাব লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল মো. মুনীম ফেরদৌস বলেন, এখন পর্যন্ত র্যাব ৪৬৬টি অবৈধ অস্ত্র ও ২১ হাজারের বেশি গুলি উদ্ধার করেছে। এর মধ্যে পুলিশের লুট হওয়া ২২৮টি অস্ত্র রয়েছে। এ ছাড়া র্যাবের লুটকৃত ১৬৬ অস্ত্রের মধ্যে ৯০টি উদ্ধার করা গেছে। অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়ে র্যাব গুরুত্ব দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ৫ আগস্টের পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে দুর্বৃত্তদের হামলায় দেশের প্রায় ৪৬০টি থানায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। অস্ত্র-গুলি লুটের পর অগ্নিসংযোগ করায় পুড়ে ছাই হয় থানার গুরুত্বপূর্ণ নথি। লুট করা অস্ত্র-গুলি কেউ নিজের কাছে রেখেছে, আবার কেউ সেগুলো বিক্রি করে দিয়েছে। এসব অস্ত্র-গুলি এখন কিশোর গ্যাং থেকে শুরু করে সব ধরনের অপরাধীদের হাতে। পাড়া-মহল্লা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে তারা। এদিকে গণভবনের দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের বিশেষায়িত অস্ত্র ও বিভিন্ন সরঞ্জামাদি এখনো উদ্ধার হয়নি। যার মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ট্যাক্টিক্যাল গিয়ার, অস্ত্র, গোলাবারুদ, সাজসরঞ্জাম, বেতার যোগাযোগ ও অপারেশনাল সরঞ্জামাদি রয়েছে। সে সময় জাতীয় সংসদ ভবন থেকে লুট হওয়া অত্যাধুনিক অ্যাসল্ট রাইফেল, স্নাইপার রাইফেল, ফ্ল্যাশব্যাং গ্রেনেড, অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেম, বেতার যোগাযোগের ডিভাইস ও বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ৩২টি ভারী অস্ত্র এখনো উদ্ধার হয়নি। যা জননিরাপত্তার জন্য ভয়ানক হুমকি। এসব অস্ত্র উদ্ধার করা এখন খুব জরুরি। যদিও যৌথবাহিনী এসব অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তবে আমরা মনে করি এই কার্যক্রম আরো জোরদার করতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব অস্ত্রগুলো উদ্ধার করে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
মন্তব্য