সব
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিন
দিন দিন বাড়ছে ডেঙ্গুতে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, গত একদিনেও ৬ শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সবচেয়ে বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলেছে আক্রান্ত রোগীর দ্রুত শকে চলে যাওয়া।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ডেঙ্গুতে ৮০ শতাংশ মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে ভর্তির ৩ দিনের মাথায়। সর্বশেষ আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ৪৫৫ জনে দাঁড়িয়েছে। মৃতের সংখ্যা ৬২ জনে ঠেকেছে। রাজধানী ছাড়াও চট্টগ্রামে চলতি মাসের প্রথম ৫ দিনে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্যব্যবস্থায় জরুরি অবস্থা ঘোষণার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, পরিস্থিতি এখনো সেই পর্যায়ে যায়নি। ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে রাজধানীতে। সুস্থ হওয়ার তুলনায় আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় প্রতি মুহূর্তেই চাপ বাড়ছে হাসপাতালে। কিন্তু রাজধানীর বেশির ভাগ হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। এখন বর্ষাকাল চলছে। এ সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
আরও পড়ুন : কখনও মনে হয়নি আমি মুসলিম এবং আলাদা: হুমা
সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে গড়ে ১২-১৫ দিন বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। তাই এ সময় এডিস মশার দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। চিকিৎসকরা বলছেন, যথাযথ নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ ও জনসচেতনতা সৃষ্টি হলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। এখনো ডেঙ্গুজ্বরের কোনো প্রতিষেধক বের হয়নি। ডেঙ্গু থেকে রেহাই পেতে হলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
গ্রামাঞ্চলেও ডেঙ্গু মশা ছড়িয়ে পড়েছে। সেজন্য শহরের পাশাপাশি গ্রামাঞ্চলেও মানুষকে সচেতন করতে হবে এবং মশক নিধন কার্যক্রম চালাতে হবে। আইইডিসিআরের তথ্যমতে, সাধারণত জুন-জুলাই থেকে শুরু করে অক্টোবর-ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ডেঙ্গুর বিস্তার থাকে। তবে এবার ভয়াবহ হতে পারে ডেঙ্গু পরিস্থিতি। সাধারণত মশক নিধন কার্যক্রমের স্থবিরতা, গাইডলাইনের অভাব এবং মানুষের অসচেতনতাই ডেঙ্গু প্রকোপের জন্য দায়ী। হঠাৎ থেমে থেমে স্বল্পমেয়াদি বৃষ্টিতে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা খুব বেশি মাত্রায় প্রজনন সক্ষমতা পায়।
ফলে এডিস মশার বিস্তারও ঘটে বেশি। উৎস বন্ধ না করতে পারলে ডেঙ্গুর ঝুঁকি থেকেই যাবে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকাতেই এবার এডিস মশার উপস্থিতি অনেক বেশি। এমনকি ২০১৯ সালের তুলনায় তা দ্বিগুণ। ২০১৯ সালে দুই সিটির ২১টি ওয়ার্ডকে উচ্চ ঝুঁকির তালিকায় রাখা হলেও এবার সেটি ৫৫টি। ঈদের পর গত ৩ জুলাই থেকে বিশেষ অভিযানে নেমেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। চলবে আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত। অন্যদিকে এখনো মাঠে নামেইনি উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ৮-১৩ জুলাই পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলোতে অভিযান চালাবে ডিএনসিসি।
সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি আমাদেরও সচেতন হওয়া জরুরি। ডেঙ্গুর উৎস এডিস মশার প্রজননক্ষেত্রগুলো ধ্বংস করা। খেয়াল রাখতে হবে, যাতে বাড়ির আঙিনা, ছাদ বা বারান্দায় পানি জমে না থাকে। এ বিষয়ে নাগরিক ও সিটি করপোরেশন উভয়েরই দায়িত্ব আছে। নাগরিকদের মনে রাখতে হবে, একজনের অবহেলা অনেকের ক্ষতি, এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে। আবার আক্রান্ত হলেও যথাসময়ে তাকে যথাযথ চিকিৎসাসেবা নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে গাফিলতির কোনো অবকাশ নেই। হাসপাতালের প্রস্তুতির বিষয়েও সংশ্লিষ্টরা নজর দেবেন।
Time news FB Link
মন্তব্য