সব
নির্বাচন কর্মকর্তার বাড়িতে আওয়ামী লীগ নেতা, রাজশাহীতে তুলকালাম
সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদের এক প্রার্থীর ভাগ্নে এক নির্বাচনী কর্মকর্তার বাড়িতে যাওয়ার পর মধ্যরাতে তুলকালাম কা- ঘটেছে রাজশাহীতে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের বিক্ষোভের মধ্যে পুলিশ ওই আওয়ামী লীগ নেতাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। সোমবার সকালে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। যাকে নিয়ে এত ঘটনা, সেই মীর ইসতিয়াক আহমেদ লিমন মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তার মামা আব্দুল হামিদ সরকার টেকন নগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী।
আরও পুড়ন: রাজশাহীতে ১৫৫ কেন্দ্রের ১৪৮টিই ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে লিমন নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাসায় যান। আবুল হোসেন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন।
লিমন ওই বাড়িতে প্রবেশ করলে স্থানীয় লোকজন এবং প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা তাকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। তাদের অভিযোগ, মামাকে জেতাতে নির্বাচনী কর্মকর্তাকে ‘ম্যানেজ করতে টাকার ব্যাগ নিয়ে’ ওই বাসায় এসেছেন লিমন।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকরা ওই বাড়ি ঘেরাও করে লিমনকে গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ করতে থাকেন। রাত ১২টার দিকে পুলিশ লিমনকে ওই বাড়ি থেকে বের করে থানায় নিয়ে যায়।
বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওর্দী হোসেন রাতে বলেন, “নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাড়ি থেকে আওয়ামী লীগ নেতা লিমনকে আটক করে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। কেন তিনি ওই নির্বাচন কর্মকর্তার বাড়িতে গিয়েছিলেন তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্তারিত জানা যাবে।”
আর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন সে সময় বলেন, লিমন তার পরিচিত, অসৎ কোনো উদ্দেশ্য তার ছিল না।
“আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য এসেছিল। নিচে তার সঙ্গে দেখা হয়েছে। সে নিচেই কথা বলতে চেয়েছিলেন। আমি তাকে আমার বাসায় নিয়ে এসেছি। লোকজন যখন বাড়ি ঘেরাও করে, তখন আমি নিজেই পুলিশকে খবর দিয়েছি। লিমন কোনো টাকা-পয়সা নিয়ে আসেনি। সৌজন্য সাক্ষাত করতে এসেছিল।”
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে ১০ টার দিকে লিমন যখন ওই বাড়িতে যান, তার সঙ্গে আরও দুইজন ছিলেন। তারা ‘টাকার ব্যাগ নিয়ে’ নির্বাচন কর্মকর্তার বাড়িতে ঢুকেছেনÑ এমন কথা ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন ওই বাড়ি ঘেরাও করে।
এ সময় লিমনের সঙ্গে থাকা দুইজন সেখান থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে ভেতরে আটকা পড়েন লিমন।
এদিকে খবর পেয়ে এলাকাবাসীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওই বাড়ির সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন আওয়ামী লীগ কর্মীদের একাংশ। এরপর পুলিশ এবং নির্বাচন কমিশনের লোকজন সেখানে যান।
খবর পেয়ে লিমনের পরিবারের সদস্য এবং তার সমর্থকরা সেখানে এলে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি শুরু হলে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে।
লিমনের বাবা মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিসদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল। মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার লিমনের মামা। তার আরেক মামা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। ডাবলু সরকার এবার মেয়র পদে নির্বাচন করতে দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু তিনি মনোনয়ন পাননি।
লিমন যখন অবরুদ্ধ ছিলেন, তখন তার বাবা মীর ইকবালসহ পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলে আসেন। পরিবারের নারীরা চিৎকার করে কান্নাকাটি শুরু করেন। মীর ইকবাল ভিড়ের মধ্যে ঢোকার চেষ্টা করলে তাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়।
লিমনকে অবরুদ্ধকারীরা বাইরে নানা স্লোগান দিচ্ছিলেন। লিমনকে গ্রেপ্তারের পাশাপাশি দল থেকে বহিষ্কারের দাবিও জানাচ্ছিলেন তারা।
বোয়ালিয়া থানার ওসি সোহরাওর্দী হোসেন সোমবার সকালে বলেন, “আওয়ামী লীগ নেতা লিমনকে রাতে থানা হেফাজতে নেওয়া হয়েছিল। সকালে আমরা তাকে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দিয়েছি।”
সূত্র : এনএনবি
Time news FB Link
মন্তব্য