সব
পাইপলাইনে জ্বালানি তেল সরবরাহ দেশের অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে
সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে সর্বাধুনিক পদ্ধতিতে গভীর সমুদ্র থেকে তেল খালাসে কক্সবাজারের মহেশখালীতে বাস্তবায়ন করা হয়েছে ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ প্রকল্প।
টির মাধ্যমে মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে গভীর সমুদ্রে স্থাপিত বয়া থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল খালাস করা হবে। এই তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে ১১০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে পৌঁছে যাবে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডে (ইআরএল)। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৭ হাজার ১৪০ কোটি টাকার এই প্রকল্পটি চালু হলে প্রতি বছর ৯ মিলিয়ন টন তেল খালাস করা যাবে।
আরও পড়ুন : করোনা : এক দিনে ৩৬ রোগী শনাক্ত, মৃত্যু ১ জনের
কমিশনিং ও টেস্টিং শেষে চলতি বছরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রকল্পটি উদ্বোধনের কথা রয়েছে। গত ২ জুলাই সৌদি আরব থেকে আনা ৮২ হাজার টন ক্রুড অয়েল পরীক্ষামূলক খালাস কার্যক্রম শুরু হয়। পাইপলাইনে ত্রুটির কারণে চালু হওয়ার ৩ দিনের মাথায় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। তবে জানা গেছে, সবকিছু ঠিক করে দ্রুতই আনুষ্ঠানিকভাবে তেল খালাস কার্যক্রম শুরু হবে। পাইপলাইনে তেল খালাসের এই প্রকল্প নিঃসন্দেহে দেশের বড় অর্জন। এই প্রকল্প জ্বালানি খাতের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করবে বলে মনে করি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করলে বছরে সাশ্রয় হবে ৮০০ কোটি টাকা। ১২ দিনের কাজ হবে ৪৮ ঘণ্টায়। ৫০ হাজার ঘনমিটারের ৩টি ও ৩০ হাজার ঘনমিটারের ৩টি ট্যাঙ্কে তেল মজুত রাখা যাবে। যা সংকটকালেও কাজে আসবে।
আগে বহির্নোঙরে লাইটারিংয়ের মাধ্যমে একটি জাহাজ থেকে তেল খালাস করতে সময় লাগত ১১-২০ দিন। অতিরিক্ত সময় বসে থাকার জন্য জাহাজপ্রতি দিনে ৩০-৪০ হাজার ডলার খরচ হতো। এই প্রকল্পের ফলে এসব টাকা সাশ্রয় হবে। রিজার্ভ সমৃদ্ধ হবে। নতুন প্রকল্পের আওতায় পাইপলাইনের মাধ্যমে মাত্র দুদিনের মধ্যে প্রায় ১ লাখ টন জ্বালানি তেল খালাস সম্ভব হবে। লাইটার জাহাজে লোড-আনলোডের সময় তেলের যে অপচয় হতো সেটি রোধ হবে, ফলে পরিবেশের ক্ষতি হবে না। এছাড়া ছোট ছোট লাইটার জাহাজের কালো ধোঁয়ায় পরিবেশ দূষিত হতো। এদিক থেকেও পরিবেশ দূষণের ক্ষতি কমবে। পাইপলাইনে তেল খালাস পদ্ধতি অধিক নিরাপদ। এতে বহু মানুষের কর্মসংস্থানও হবে। প্রকল্পটি মহেশখালীতে হওয়ায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এখানকার মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
সব মিলিয়ে এই প্রকল্প জ্বালানি খাতের জন্য আশীর্বাদ- সন্দেহ নেই। অগ্রাধিকারভিত্তিক এই প্রকল্পের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা আশা করি, এই প্রকল্পের সুফল দেশের অর্থনীতিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে এবং বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। বছরের বিভিন্ন সময় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। আমরা আশাবাদী যে, প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জ্বালানি খালাসে প্রতিবন্ধকতা দূর হবে এবং জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। মোটকথা, দেশের আমদানি-নির্ভর জ্বালানি তেল সরবরাহে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।
মন্তব্য