সব
বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রো-সোলার বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু করল চীন
চীন বিশ্বের সবচেয়ে বড় হাইড্রো-ফটোভোলটাইক (পিভি) কমপ্লিমেন্টারি পাওয়ার স্টেশন নির্মাণ করেছে। রোববার ১ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম এই পাওয়ার স্টেশনটি প্রাথমিক অপারেশন চালিয়েছে। চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক (সিজিটিএন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
চীনের কেলায় অবস্থিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বিশ্বের বৃহত্তম এবং সর্বোচ্চ উচ্চতার হাইড্রো-সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা জল-আলোর পরিপূরক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। রোববার থেকে এটি পুরোপুরিভাবে চালু হয়েছে।
কেলা ফটোভোলটাইক পাওয়ার স্টেশনটি হাইড্রো-সোলার পাওয়ার গ্রিডের জন্য ১ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম। এটি মাত্র ১ ঘণ্টায় ৫৫০ কিলোমিটারের মধ্য ১৫ হাজার বৈদ্যুতিক যানকে চার্জ করতে পারে।
আরও পড়ুন : ইউক্রেন যুদ্ধে যেভাবে প্রভাব ফেলতে পারে ওয়াগনার বিদ্রোহ
দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের ইয়াজিয়াং কাউন্টির গার্জের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত প্রিফেকচারের ইয়ালং নদীর অববাহিকায় এই প্ল্যান্টটি অবস্থিত। এটি বছরে ২ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা (কেডব্লিউএইচ) উৎপাদনে সক্ষম; যা ৭ লাখ পরিবারের চাহিদা পূরণ করবে।
পাওয়ার চায়না চেংডু ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানির নির্মাণ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ইয়াং ঝিওয়েই চায়না মিডিয়া গ্রুপকে (সিএমজি) বলেছেন, এটি ৬ লাখ টন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সমান; যা ১ দশমিক ৬ মিলিয়ন টনেরও বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন হ্রাস করবে।
সূর্যালোকের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে পিভি সৌরবিদ্যুৎ স্টেশনগুলোর উৎপাদন আবহাওয়ার ওপর নির্ভরশীল হয়। জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র এ ধরনের পরিস্থিতি সহজেই সামাল দিতে পারে ফলে স্থিতিশীল এবং উচ্চমানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
কেলা পিভি পাওয়ার প্ল্যান্টটি ন্যাশনাল হাইওয়ে ৩১৮-এর পাশেই। এটি সিচুয়ান এবং পার্শ্ববর্তী স্বায়ত্তশাসিত শিয়াজাং অঞ্চলের সঙ্গে প্রধান পরিবহন রুট। ১৬ মিলিয়ন বর্গমিটারের বেশি এলাকা নিয়ে গঠিত এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ২ হাজার ফুটবল মাঠের চেয়ে বড়।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ভূমি থেকে প্রায় ৪ হাজার ৬০০ মিটার উচ্চতায় তৈরি করা হয়েছে, যা বিশ্বের তৃতীয় মেরু অঞ্চল শিয়াজাংয়ের আলি এলাকার উচ্চতার সমান এবং তিব্বতের লাসা শহর থেকেও ১ হাজার মিটার ওপরে অবস্থিত।
মোট ৫ লাখ ২৭ হাজার ফোটোভোলটাইক ফাউন্ডেশন পাইল পাওয়ার স্টেশনে ইনস্টল করা আছে। যার ওজন চীনের প্রথম অভ্যন্তরীণভাবে নির্মিত বড় যাত্রীবাহী বিমান ২২২ সি ৯১৯-এর সমান।
এই ফটোভোলটাইক পাইলগুলোকে সংযুক্ত করা হলে মোট দৈর্ঘ্য ৪০০ কিলোমিটারের বেশি হবে, যা বেইজিং-তিয়ানজিন রেলওয়ের মোট দৈর্ঘ্যের ১১ গুণ। পিভি পাওয়ার হাউসের জন্য প্রায় ৫০ হাজার টন ইস্পাত ব্যবহার করা হয়েছিল; যা দিয়ে ২০২২ সালের বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ন্যাশনাল স্টেডিয়ামের (বার্ডস নেস্ট) মতো আরেকটি ভেন্যু তৈরি করা যেত।
দুই মিলিয়নেরও বেশি ফটোভোলটাইক মডেল একত্রিত করা হয়েছিল। উপাদানগুলো চীনের অর্ধেকজুড়ে ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটারের পরিবহণ দূরত্বসহ তিনটি বেইজিং ড্যাক্সিং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এলাকাকে কভার করতে পারে।
চীন দীর্ঘমেয়াদি শক্তির জোগান নিশ্চিত করতে বিকল্প উপায় খুঁজছে। এর প্রথম উদ্যোগ হলো জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা ১৪ তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় (২০২১-২৫) ইয়ালং নদীর ক্লিন এনার্জি তটরেখায় নির্মিত হয়েছে। পাওয়ার চায়না চেংডুর ডিজাইন অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট ২০১৬ সালে কেলার জন্য প্রকল্প পরিকল্পনা শুরু করে; যার নির্মাণ শুরু হয় ২০২২ সালের জুলাই মাসে।
ইয়ালং নদীর লিয়াংহেকৌ জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্প, যা মার্চ মাসে মোট ৩ মিলিয়ন কিলোওয়াট সক্ষমতা নিয়ে চালু করা হয়েছিল। কেলা থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ লিয়াংহেকাউয়ের সঙ্গে সংযুক্ত হবে এবং তারপরে পাওয়ার গ্রিডে একত্রিত হবে। দুটি মিলে একটি বিশাল নবায়নযোগ্য শক্তি জোগানের ক্ষেত্র তৈরি করবে।
কাজ সমাপ্তির পর মাসে ১০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট এবং বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট সক্ষমতার ইয়ালং রিভার ক্লিন এনার্জি বেস ১০ লাখ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা পূরণ করবে।
উপরন্তু প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত বিশ্বের বৃহত্তম সবুজ, পরিচ্ছন্ন এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ঘাঁটিতে পরিণত হবে। যার ফলে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, জাতীয় শক্তিকাঠামোর সর্বোচ্চ ব্যবহার, কৃষি ও পর্যটন শিল্পগুলোকে উন্নত করার লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে।
সূত্র : এনএনবি
Time news FB Link
মন্তব্য