সব
রংপুরে আর কখনও মঙ্গা হবে না : প্রধানমন্ত্রী
সরকারের পরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে রংপুর অঞ্চলে আর কোনোদিন মঙ্গা দেখা দেবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “শেখ মুজিবের বাংলায় কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। এই অঞ্চলে আর কোনোদিন দুর্ভিক্ষ বা মঙ্গা দেখা দেবে না। আমরা সেইভাবেই সব ধরনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
বুধবার রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
বক্তব্যের শুরুতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মক্তিযুদ্ধে শহীদ, ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “শত বাধার পরেও বাংলার মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য বাংলার মাটিতে ফিরে এসেছি। দেশে ফেরার পর রংপুরের প্রতিটি জেলা, প্রত্যন্ত অঞ্চল ঘুরেছি। সেসময় মানুষের হাহাকার দেখেছি, মানুষের পেটে খাবার ছিল না। আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল যখনই সরকার গঠন করব এসব মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করব, জীবনমান উন্নত করব।
আরও পড়ুন : এবার কলকাতার সিনেমায় পরীমনি
তিনি বলেন, “আজকের বাংলাদেশ আমরা দারিদ্র্যের হার কমাতে পেরেছি, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রংপুরে কখনও মঙ্গা দেখা দেয়নি। নৌকা মার্কা ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।”
এসময় বিএনপি সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কারণে এদেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয়নি।
“গত সাড়ে ১৪ বছরে যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি, কাজের ব্যবস্থা করেছি। রংপুরকে বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বিভাগের সঙ্গে সঙ্গে সে অনুযায়ী সব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, সিটি করপোরেশন হয়েছে।”
উত্তরবঙ্গের মানুষ যেন অতি সহজে রাজধানীতে পৌঁছাতে পারে সে ব্যবস্থা করেছেন বলেও জানান তিনি।
তার সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কথা এ সময় তুলে ধরেন তিনি। নারীশিক্ষার উন্নয়ন, কমিউনিটি ক্লিনিক, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, বিধবা ভাতা ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ কৃষকদের বন্ধু, তাদের জন্য ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছি। এই ব্যাংকের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ কার্ড দিয়েছি, যা দেখিয়ে তারা দোকান থেকে কৃষিকাজে ব্যবহৃত পণ্য কিনতে পারছে। সারের দাম কমিয়ে দিয়েছি, এখন কৃষককে সার কিনতে যেতে হয় না; সার কৃষকের ঘরে পৌঁছে যায়, সেই ব্যবস্থা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, “ওয়াদা করেছিলাম সবার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেব, সেটা দিতে পেরেছি। তবে মাঝে কয়লা আর গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় কয়েকদিন কষ্ট করতে হয়েছে। এখন আর কোনো সমস্যা নেই। আপনাদের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
এত বছর পর রংপুরে খালি হাতে আসেননি জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি আপনাদের জন্য উপহার নিয়ে এসেছি। আপনারা দেখেছেন কিছুক্ষণ আগে কতগুলো প্রকল্প উদ্বোধন করেছি। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের যেন উন্নয়ন হয় সে ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।”
রংপুরের উন্নয়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও জনগণের জীবনমান উন্নত করতে নেওয়া প্রকল্পগুলোর কথাও তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, অনেক সংগ্রামের পথ বেয়ে অনেক আন্দোল করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিয়েছি। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেওয়ার জন্য ভোটার তালিকাও করেছি। আমরা প্রত্যেক এলাকায় উন্নয়নের জন্য কাজ করেছি। নারীদের জন্য কাজের সুবিধা করে দিয়েছি। আমাদের কাজের লক্ষ্য দেশের ভাগ্য পরিবর্তন করা, দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নতি করা। এ অঞ্চলে জীবনেও দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে না, মঙ্গা দেখা দেবে না। বাংলাদেশে কোনো ভূমিহীন মানুষ থাকবে না। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তায়নও করবো।
বিএনপির কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাস্তায় চলন্ত বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। এরা কি মানুষের জাত? এরা মানুষের জাত নয়। ক্ষমতায় থাকতে লুটপাট করেছে। আর ক্ষমতার বাইরে থেকে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। রাস্তাঘাট ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। নতুন রেল কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। বাস কিনেছি পুড়িয়ে দিয়েছে। ওই খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমান জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংস করতে পারে। এরা মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। দেশের টাকা পাচার করে বিদেশে নিয়ে এখন সেই টাকা ব্যবহার করে যাচ্ছে। কোত্থেকে আসে এত বিলাসিতা! সেটাই আমার প্রশ্ন। দেশের মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের মামলায় শাস্তির প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের দুর্নীতির মামলা। এই মামলা তো আমরা করিনি। তাদের প্রিয় ইয়েস উদ্দিন-ফখরুদ্দিন করেছে। সেই মামলায় তারা শাস্তি পেয়েছে। তারা দেশ ধ্বংস করে। আমরা সৃষ্টি করি।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়া নিজে ফেল করা বলে ভাবে কেউ পাস করবে না। এ জন্য শিক্ষার হার তারা কমিয়ে ফেলেছে। আমরা আবার উদ্যোগ নিয়ে শিক্ষার হার বাড়িয়েছি। আমরা বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করে দিচ্ছি।
অনেকেই ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি কেউ এই রংপুরের উন্নয়নে কাজ করেনি। এই নৌকা মার্কা ক্ষমতায় আসলে কাজ হয়। নৌকা মার্কা ছাড়া হয় না। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজ দারিদ্র্য বিমোচন হয়েছে। হতদরিদ্র মাত্র ৫ শতাংশ। এটাও থাকবে না। যারা এক বেলা খাবার পেতো না, এখন দুই-তিন বেলা খাবার সুযোগ হয়েছে। দেশের কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ প্রত্যেকের ভাগ্য পরিবর্তনে আওয়ামী লীগ কাজ করে যাচ্ছে। যার সুফল আপনারা পাচ্ছেন। দেশের মানুষ পাচ্ছে।
সমাবেশে আসা মানুষকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, এই মাঠ ছোট বলে অনেকে দূরে বসে আমার কথা শুনছেন। আপনাদের চোখের দেখায় দেখতে পাচ্ছি না। তবে আপনারা আছেন আমার হৃদয়ে। হৃদয় দিয়ে আপনাদের ভালোবাসা উপলব্ধি করি।
এর আগে দুপুর ২টায় তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি রংপুর সেনানিবাস হেলিপ্যাডে পৌঁছায়। এরপর সড়কপথে সার্কিট হাউজে যান প্রধানমন্ত্রী। সেখানে বিভাগীয় পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সভায় অংশ নেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
এর আগে দুপুর সোয়া ১২টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে জনসভার কার্যক্রম। রংপুরের ঐতিহাসিক জিলা স্কুল মাঠ নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় ভরে যায়। মাঠ ছাড়িয়ে প্রধান সড়কের দুদিকে অবস্থান নেন বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতাকর্মীরা। নানা রঙের পোশাক আর বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে গান গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা।
রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে জনসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এছাড়া সাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মোতাহার হোসেন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, নৌ পরিবহন মন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, পানি সম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান, সাবেক সাংস্কৃতিক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস.এম কামাল হোসেন ও সুজিত রায় নন্দীসহ অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
সূত্র : এনএনবি
Time news FB Link
মন্তব্য