সব
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী নিয়ন্ত্রণে আনার উদ্যোগ নিন
সৌদি আরবের একটি সোফা তৈরির কারখানায় গত শুক্রবার অগ্নিকাণ্ডে নয়জন বাংলাদেশি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। দুর্ঘটনায় একজন ভারতীয় নাগরিকও মারা গেছেন। গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকাল ৪টার দিকে রাজধানী রিয়াদ থেকে ৩৫০ কিলোমিটার পূর্বে আল আহসা শহরের হুফুফ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি এলাকার ওই কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটে।
আরও পড়ুন : ডেঙ্গুর প্রকোপ : শিশুদের বাড়তি যত্ন প্রয়োজন
খুবই দুঃখজনক যে, প্রবাসীদের মৃত্যুর খবর নতুন নয়। এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। তা সত্ত্বেও প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুহার কমাতে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়নি। প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যুহার বেশি। প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ৯৪ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যুর কারণ কর্মস্থলে দুর্ঘটনা, সড়ক দুর্ঘটনা ও হৃদরোগ। এছাড়া আত্মহত্যা ও হত্যাকাণ্ডে বিদেশে প্রাণ হারাচ্ছেন অনেক শ্রমিক। বেশির ভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৪০-এর মধ্যে। জানা গেছে, বিগত এক দশকে প্রায় ৩৪ হাজার প্রবাসী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সৌদি আরব, আরব আমিরাত, মালয়েশিয়া, ওমান ও কুয়েতের মতো দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের সংখ্যা বেশি। এসব দেশ থেকে মরদেহও আসছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ বিভিন্ন দেশে কাজ নিয়ে অভিবাসনে আছেন।
সৌদি আরবে প্রায় ১.২ মিলিয়নের বেশিসংখ্যক বসবাস করে। সৌদি আরব ছাড়াও আরব বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে যেমন- কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশি প্রবাসী বসবাস করেন। সেখানে বাংলাদেশিদের বিদেশি কর্মী হিসেবে ধরা হয়। প্রবাসী আয়ে বাংলাদেশের স্থান এখন সপ্তম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আসা প্রবাসী আয় কিছুটা কমলেও বাংলাদেশের বেড়েছে রেমিট্যান্স আয়। আমাদের রিজার্ভের বড় একটি উৎস হচ্ছে আমাদের অভিবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিট্যান্স। কিন্তু এই রেমিট্যান্স আয় করতে গিয়ে অভিবাসী শ্রমিকরা নানা ধরনের নির্যাতন, সহিংসতা ও দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকেন। বিদেশে বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যুর পর মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ আদায় একটি আন্তঃরাষ্ট্রিক বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই এখানে সরকারেরই মুখ্য ভূমিকা নিতে হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের টাকা আদায় করতে সংশ্লিষ্ট দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসকে মূল ভূমিকা পালন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখতে যে কয়টি খাত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তার মধ্যে একটি হলো প্রবাসী আয়। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখার পাশাপাশি অর্থনৈতিকভাবে সহযোগিতা করছেন, তাদের পরিবার-পরিজনদের সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স সমৃদ্ধ করছে দেশের মূল অর্থনীতিকে। কিন্তু শ্রমিকদের সুরক্ষার বিষয়টি বরাবরই উপেক্ষিত।
কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার পর নিহতদের পরিবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার দাবিদার হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যুগ পেরোলেও সেই ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য তাদের অপেক্ষার প্রহর আর শেষ হয় না। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দূতাবাস ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তরগুলোকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদেশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকের ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়টিতে সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেয়া দরকার। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে- এই প্রত্যাশা আমাদের।
মন্তব্য