
বাজার সিন্ডিকেটের কারণেই আজ ক্রেতার নাভিশ্বাস। সিন্ডিকেটই খেয়ে ফেলছে দেশের মানুষের বাজারের টাকা। এটা দেখার দায়িত্ব কার? এই সিন্ডিকেট ভাঙবে কে? মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে চাল, ডাল ও তেল থেকে শুরু করে সব নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেছে। এখনো উত্তাপ ছড়াচ্ছে কাঁচামরিচে।
আরও পড়ুন : এশিয়া কাপে বাংলাদেশের ম্যাচ কবে কোথায়
চিনি, পেঁয়াজ, আলু, আদা ও ডিমের দামও কম নয়। অতি মুনাফালোভী পাইকারি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে ভোক্তাদের জিম্মি করে পণ্যের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ খুচরা ব্যবসায়ীদের। মাস দুই আগেও দেশের বাজারে এক কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। এরপর এক লাফে হলো ৫০ টাকা। পরে বেড়ে হলো ৮০-১০০ টাকা কেজি। করোনা শুরুর আগে ৯০-১০০ টাকা কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম কয়েক ধাপে বেড়ে হয়ে যায় ২৮০ টাকা। আর ২২০ টাকা সোনালি মুরগির কেজি হয়ে যায় ৩৮০-৪০০ টাকা। এছাড়া ১০০ টাকা ডজন ডিমের দাম বেড়ে হয়েছে ১৪৫-১৫০ টাকা।
এতে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। তারা বলছেন, সব কিছুর দাম বাড়ায় সংসার খরচ বেড়ে গেছে। যে কারণে আয়ের সিংহভাগ চলে যাচ্ছে নিত্যপণ্যের পেছনে। চাহিদার সঙ্গে দাম যাতে না বাড়ে, সেজন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সংস্থাগুলো দৃশ্যত কিছু বিশেষ ব্যবস্থাও নিয়ে থাকে। তবে আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে, এসব ব্যবস্থা বাজার নিয়ন্ত্রণে ইতিবাচক তেমন প্রভাব ফেলতে পারে না।
বাজার ঘুরে ও বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কারণে-অকারণে দেশে একেক সময় একেক পণ্যের দাম বাড়ছে। কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তা সহজে কমছে না। দাম বাড়ানোর সুনির্দিষ্ট কারণ না থাকলেও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, ডলারের দাম বেড়ে যাওয়া, সময়মতো এলসি খুলতে না পারাসহ বিভিন্ন যুক্তি দাঁড় করিয়ে রেখেছেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি সরবরাহ সংকট দেখাতে অনেক সময় বাজার থেকে পণ্য হাওয়া করে দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। এসব কাজে শক্ত ভিত তৈরি করে রেখেছে অসাধু সিন্ডিকেট। তবে এ সিন্ডিকেট ভাঙতে বিভিন্ন সময় সরকারি উদ্যোগ দেখা গেলেও কার্যকর হয়নি।
এমতাবস্থায় বাজার স্থিতিশীল রাখতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে যাতে বাজারকে অস্থিতিশীল করতে না পারে, সেদিকে লক্ষ রাখার কথা জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করছেন কর্মকর্তারা। এসব তৎপরতায় কোনো সাফল্য আসেনি। সম্প্রতি একটি দৈনিকের খবরে বলা হয়েছে, বাজারের ৮টি আমদানিকারক সিন্ডিকেট লালনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কতিপয় কর্মকর্তা জড়িত। সিন্ডিকেটটি চাল থেকে শুরু করে ডাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, শাক-সবজি, চিনি, মসলা, আটাসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কারসাজি করে দাম বাড়াচ্ছে। সরকার এ খবরকে বিবেচনায় আনতে পারত। সেটাও হয়নি।
বাজার নিয়ন্ত্রণে টিসিবির মাধ্যমে খোলাবাজারে পণ্য বিপণন, বাজার মনিটরিং ইত্যাদি যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে, এগুলো যেন যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্য পরিবহন নির্বিঘ্ন রাখতে বিশেষ করে কৃষিপণ্যের সরবরাহে যাতে কোনো বাধার সৃষ্টি হতে না পারে সেদিকে নজর রাখতে হবে সংশ্লিষ্টদের। এর বাইরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বাজার পরিস্থিতি তদারকি অব্যাহত রাখতে হবে।