
রাজধানীতে নষ্ট লাইটের আঁধারে ছিনতাই হচ্ছে। রীতিমতো ভয়ংকর হয়ে উঠেছে ছিনতাইকারী চক্র। ছুরি, চাপাতি কিংবা আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। এমনকি ছিনতাইয়ের ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। পুলিশ সদস্যরাও এদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো জনমনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। বিশেষ করে রাতে রাস্তায় চলাচলকারী লোকজনের মনে সারাক্ষণ ছিনতাই আতঙ্ক লেগেই থাকে। গত ১ জুলাই রাজধানীর ফার্মগেটে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে মনিরুজ্জামান তালুকদার নামে পুলিশের এক সদস্য নিহত হয়েছেন। ছুটি শেষে গ্রামের বাড়ি শেরপুর থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে ফিরছিলেন তিনি। এর ২ দিন আগে রাত আড়াইটার দিকে রামপুরায় বিটিভি অফিসের সামনের রাস্তায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে রাকিবুল হাসান রানা (৩০) নামে এক সাংবাদিক গুরুতর আহত হন। তিনি বেসরকারি ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের সহকারী প্রযোজক। এসব ঘটনা প্রমাণ করে রাজধানী ঢাকা সাধারণ মানুষের চলাফেরার জন্য কতটা অরক্ষিত শহর। ডিএমপির হিসাব অনুযায়ী, গত বছর ছিনতাইয়ের ঘটনায় অন্তত ২০ জন নিহত হয়েছেন। চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় ৪৮৬টি চুরি, ৬১টি ছিনতাই ও ১০টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। প্রকৃতপক্ষে এ পরিসংখ্যান আরো বেশি। সব ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়ায় না। আমরা দেখছি, ছিনতাই রোধে পুলিশ কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না। যদিও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অপরাধীদের গ্রেপ্তারে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালিত হচ্ছে, অনেক চক্র ধরাও পড়ছে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তাহলে প্রশাসনের এত প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে কেন, তা একটি দুর্বোধ্য বিষয়। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলা হলেও প্রকৃত অবস্থা যে ভিন্ন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য নিজের জীবন দিয়ে তা দেখিয়ে গেছে। শুধু কথায় ও বক্তৃতা-বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কথা না বলে বাস্তবে তা দৃশ্যমান করে তোলার ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দায়িত্বশীল হতে হবে। পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে সহযোগী একটি পত্রিকায় প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজধানীর ৫০টি থানার ১৪০টি স্পটে ছিনতাই নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পুলিশ স্থানগুলো চিহ্নিত করতে পারলেও ছিনতাই ঠেকাতে পারছে না। মানুষের নির্বিঘ্নে পথচলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে ছিনতাইকারীরা। বিশেষ করে ভোরে এবং সন্ধ্যার পর তাদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ৫ হাজার ৯১৯টি সড়ক বাতি অকার্যকর রয়েছে। এ সুযোগ ছিনতাইকারী চক্র কাজে লাগাচ্ছে। জননিরাপত্তার স্বার্থে ছিনতাইকারীদের দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। ছিনতাই চক্রকে ধরা ও জননিরাপত্তা রক্ষায় বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ, র্যাব ও অন্যান্য সংস্থার সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি ভাবা যেতে পারে। ছিনতাই রোধে অবশ্যই ছিনতাইকারীদের ধরে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ছিনতাইকারীরা জামিনে বেরিয়ে এসে আবারো ছিনতাইয়ে জড়িত হওয়া খুবই উদ্বেগের। সহজে জামিনে বেরিয়ে এসে তারা যেন আবার এসব অপরাধে জড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। অকার্যকর লাইটগুলো দ্রত মেরামতেরও উদ্যোগ নিতে হবে সিটি করপোরেশনকে। তাহলে কিছুটা হলেও ছিনতাইয়ের ঘটনা হ্রাস পাবে।