
আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা মামলার আসামিরা এখনো অজানা কারণে অধরা। এ মামলা দায়ের আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও আসামিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ বলছে, এ মামলার আসামিরা আত্মগোপনে আছেন। তাদের ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছেন।
এরআগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক সম্পর্কে মানহানিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ইয়াসির আরাফাত তুষার বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ২২ জুলাই বিকেলে কুষ্টিয়ায় আদালত থেকে ওই মামলায় জামিন নিয়ে বের হওয়ার সময় সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা ও হত্যা চেষ্টা করা হয়। আদালত প্রাঙ্গণ ছাড়ার সময় লাঠি ও ইটপাটকেল দিয়ে প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তার ওপর হামলা করে। এতে রক্তাক্ত হন তিনি। তাকে বহনকারী গাড়ির গ্লাসও ভেঙে দেওয়া হয়।পরে ওইদিন বিকেলেই আদালত প্রাঙ্গণ থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে মাহমুদুর রহমান ও তার সহযোগীরা ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন।
আরও পড়ুন : গজারিয়ায় ট্রলার-স্পিডবোট সংঘর্ষে নিহত বেড়ে ৪
৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর হামলার ওই ঘটনার প্রায় ছয়বছর পর বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান নিজেই বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (৭৭), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল (৭৪), কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ (৬৫), কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু (৭৭), পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী (৬৩), কুষ্টিয়ার সাবেক পুলিশ সুপার এস.এম মেহেদী হাসান, কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, কুষ্টিয়া শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান আতা, কুষ্টিয়া সদর থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীসহ মোট ৪৭ জনের নাম উল্লেখ করে এছাড়াও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ১৫-২০ জনকে। এ মামলার আড়াই মাস পেরিয়ে গেলেও কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে ছাড়া অন্য আসামিদের এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুর রাজ্জাক বাচ্চু বলেন, এ মামলার প্রায় আড়াই মাস পেরিয়ে গেছে। তবুও আসামিদের গ্রেফতারে পুলিশের ন্যূনতম চেষ্টা নাই। আসামিরা বিভিন্ন এলাকায় বীরদর্পে ঘুরে বেড়াচ্ছে। অথচ পুলিশ বলছে, তাদের পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা এঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি, অবিলম্বে আসামিদের গ্রেফতারের দাবী জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়া জেলা বিএনপি সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড, শামীম উল হাসান বলেন, আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফেরার সময় পুলিশ প্রশাসনের সামনেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানের ওপর হামলা করলেন। এতেই বোঝা যায় স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের শাসন আমল। ওই সময় হামলাকারীদের পুলিশ সহায়তা করেছিল। থানায় মামলা দিতে গিয়েও পুলিশ তা নেয়নি। এ হামলায় জড়িতদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
কুষ্টিয়ার মানবাধিকার কর্মী হাসান আলী বলেন, রাজনৈতিক দূর্বৃত্তায়নে দীর্ঘদিন ধরে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু রয়েছে। সাধারণ নাগরিক জীবনের সর্বশেষ আস্থা ও নিরাপদ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগের নির্লিপ্ত নিরবতার কারনে কোন মানুষই নিরাপদ নয়। লাগামহীন সহিংসতায় গুরুতর জখম কিংবা হত্যাকান্ডের ঘটনাতেও যেখানে সাধারন নাগরিক ন্যায় বিচার বঞ্চনার শংকায় দিন কাটায়। সেই চিত্র যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে তা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান বা গণমাধ্যম কর্মী মাহমুদুর রহমানের উপর হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা এবং তৎপরবর্তী আইনী প্রতিকারের দৃষ্টান্তই হতে পারে প্রকৃষ্ট উদাহরন।
এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই খায়রুজ্জামান জানান, এ মামলার পর থেকেই মাঠ পযার্য়ে কাজ করছে পুলিশ। আসামি ধরতে পুলিশের কোনো গাফিলতি নেই। তাদের ধরতে অভিযান চলমান।
কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিহাবুর রহমান শিহাব বলেন, এ মামলায় একজন আসামি কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুর রউফকে শুধু গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে।