
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তাদের কার্যক্রম কমিয়ে আনলে তা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে বলে সতর্ক করেছেন সামরিক বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকরা। পেন্টাগন এবং প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মকর্তারা জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচিগুলো সামরিক ব্যয়ের একটি অপ্রয়োজনীয় দিক হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
ফেব্রুয়ারিতে জার্মানির এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব পিটার হেগসেথ (Pete Hegseth) সাংবাদিকদের বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা পেন্টাগনের কাজ নয়। ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রতিরক্ষা সচিব রবার্ট সালেসেস (Robert Salesses) গত মাসে এক বিবৃতিতে জানান, তারা আগের প্রশাসনের ‘জলবায়ু পরিবর্তন’ এবং অন্যান্য ‘উইক’ (woke) কর্মসূচি’ সহ অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বন্ধ করবেন।
কিন্তু অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সুদূরপ্রসারী ক্ষতির কারণ হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমার মনে হয়, তারা ‘জলবায়ু’ শব্দটি নিয়ে আটকে আছে, কিন্তু এর ফলস্বরূপ যে সামরিক প্রস্তুতিতে সমস্যা হবে, সেটি দেখতে পাচ্ছে না।”
পেন্টাগন মুখপাত্র জন উলিয়ট (John Ullyot) এক বিবৃতিতে জানান, প্রতিরক্ষা দপ্তর “ট্যাক্সদাতাদের স্বার্থে” ব্যয় সংকোচ এবং সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্যে ফিরে আসার জন্য ‘ডগ’ (DOGE) এর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, “বামপন্থীদের জলবায়ু বিষয়ক বাড়াবাড়ি এবং অন্যান্য দুর্বল ধারণা সামরিক বাহিনীর মূল কাজের অংশ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনীর সাবেক সহকারী সচিব ড. রবি চৌধুরী (Dr. Ravi Chaudhary) সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, জলবায়ু বিষয়ক কর্মসূচিগুলো কেবল যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীকে চীনের মতো প্রতিপক্ষের চেয়ে এগিয়ে রাখতেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এটি সামরিক বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা রক্ষাতেও সহায়ক।
চৌধুরী আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ ঘাঁটিতে উৎক্ষেপণ বিলম্বিত হওয়া, আলাস্কার রানওয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া, এবং ঘূর্ণিঝড়ের সময় সমুদ্রের জলচ্ছ্বাস থেকে ঘাঁটি রক্ষার জন্য প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম বাঁধ তৈরি করতে সমস্যা হওয়া ইত্যাদি।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা উইল রজার্স (Will Rogers) সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে খাটো করে দেখা হলে তা গুরুত্বপূর্ণ আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টাগুলোকে পঙ্গু করে দিতে পারে। এর ফলস্বরূপ দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি উপেক্ষা করলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ক্ষতি করতে পারে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জগুলোর ক্ষেত্রে, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তন একটি প্রধান উদ্বেগের কারণ। চীন এই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারে এবং ঐসব দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। কারণ, ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে কোনো সংঘাতের সৃষ্টি হলে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ঐ দ্বীপগুলোতে বিমানঘাঁটি এবং বন্দর ব্যবহারের প্রয়োজন হবে।
সম্প্রতি, পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পার্নেল (Sean Parnell) এক ভিডিওতে উল্লেখ করেন, ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণার জন্য ১.৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে, যেখানে আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। পার্নেল বলেন, “এগুলো আমাদের সামরিক বাহিনীর মূল কাজ নয়। এগুলো আমাদের মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করে।
ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই প্রকল্পের প্রধান গবেষক লিওনার্দো ভিয়ালাঁ (Leonardo Villalón) জানান, তাদের গবেষণার প্রধান উদ্দেশ্য ছিল আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলের মানুষজন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং এর ফলস্বরূপ তারা কোন ধরনের ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে, সেটি পর্যবেক্ষণ করা।
এই গবেষণার মাধ্যমে মূলত দেখা হচ্ছিল, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ওই অঞ্চলের মানুষজন খাদ্য সংকটে পড়লে অথবা উদ্বাস্তু হয়ে অন্য কোথাও গেলে, তা কিভাবে ওই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করবে।
ভিয়ালাঁ আরও বলেন, গবেষণার জন্য ইতিমধ্যে অনেক অর্থ খরচ হয়ে গেছে এবং পেন্টাগন তাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই এই প্রকল্পের অর্থ বন্ধ করে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর সম্প্রতি ঘোষণা করেছে, তারা সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণা কার্যক্রম বন্ধ করে দিচ্ছে। এর মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তন এবং অভিবাসন বিষয়ক গবেষণাগুলোও রয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথম বছরে প্রায় ৩ কোটি ডলার সাশ্রয় হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন